ঢাকাঃ জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা বা কোনো ক্রিমিনাল যাতে পাসপোর্ট না পায় তার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন,‘পাসপোর্টে দুর্নীতি বন্ধের জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অধিদফতরে শনিবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সকালে ‘পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ
২০১৭’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।এর আগে তিনি বেলুন উড়িয়ে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করেন। এবাবের প্রতিপদ্য বিয়ষ ‘পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার : নিঃস্বার্থ সেবাই অঙ্গীকার।’পাসপোর্টে দুর্নীতি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি জায়গায় দুই একজন দুর্নীতিবাজ থাকে। যারা অপকর্মে জড়িত তাদের বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। পাসপোর্টে দুর্নীতি
বন্ধের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হাতে কীভাবে পাসপোর্ট যায় এমন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিদের হাতে যাতে পাসপোর্ট না যায়
সেজন্য এসবি ক্লিয়ারেন্স অত্যন্ত জরুরি । জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা বা কোনো ক্রিমিনাল যাতে পাসপোর্ট না পায় সেজন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের হাত দিয়ে কোনও জঙ্গি-সন্ত্রাসী আর পাসপোর্ট পাবে না।’এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আগে প্রবাসীদের পাসপোর্ট পেতে তিন থেকে ছয়মাস লেগে যেত। আমরা পাসপোর্ট
তৈরির পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোয় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করে প্রবাসীদের কাছে পাঠানো হতো। এখন আমরা আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ফেডেক্সের সঙ্গে চুক্তি করেছি। প্রবাসীদের
পাসপোর্টগুলো এখন তিনদিনের মধ্যে নিজ নিজ দূতাবাসে চলে যাবে। সেখান থেকে তারা ৭ দিনের মধ্যে তা পেয়ে যাবেন।’
ভবিষ্যতে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু হলে আর কেউ দুর্নীতি করতে পারবে না বলেও জানান তিনি। তবে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে সাধারণ মানুষ এসবির সদস্যদের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি
বলেন, ‘পাসপোর্ট পাওয়া যেমন সব নাগরিকের অধিকার রয়েছে তেমনি কে বা কারা পাসপোর্ট নিচ্ছে তাদের ব্যাপারে সব তথ্য জানার অধিকার আইনের রয়েছে। তবে কেউ যাতে বিড়ম্বনা বা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে দৃষ্টি রয়েছে আমাদের। আর পাসপোর্ট যারা পাচ্ছে তারা কি করছে কিংবা বিদেশে গিয়ে কি করবে সেটাও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
ভবিষ্যতে অনলাইনের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চালু হলে সেই বিড়ম্বনাও থাকবে না বলে জানান তিনি।জঙ্গিদের হাতে পাসপোর্ট চলে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভেরিফিকেশনটা এ জন্যই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোনো ক্রিমিনাল বা জঙ্গি যাতে পাসপোর্ট না পায়।’ পাসপোর্টের রেভিনিউ নিয়ে বলেন, ‘এখন থেকে ৫ বছর নয়; মানুষের বয়স তুলনা করে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানো হবে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বয়স বাড়লে মানুষের আকার আকৃতির পরিবর্তন হয় তাই সেই
কথা চিন্তা করেই ভবিষ্যতে পাসপোর্টের মেয়াদ কতদিন হবে তা বিবেচনায় আনা হবে। তিনি বলেন, বিদেশে যারা আছেন তাদের কাছে দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট পৌঁছার জন্য আজ Fedex এর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতরের। এ চুক্তির মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব নাগরিক ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট সহজেই পাবে বলে আশা করছেন তিনি। ভবিষ্যতে পাসপোর্টের সেবার মান আরো উন্নত হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই আশা ব্যক্ত করে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ২০১৬ সালে ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ৭১টি পাসপোর্ট অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ সময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পাসপোর্ট সেবা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ করাও দরকার।’ বর্তমানে পাসপোর্ট সেবা প্রক্রিয়ার প্রশংসার পাশাপাশি জঙ্গিদের হাতে পাসপোর্ট যাওয়ার বিষয়টিরও সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টের সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জড়িত। ৩০ বিলিয়ন রিজার্ভ অর্জনের ক্ষেত্রে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের অবদান রয়েছে। এই উন্নয়নের ভিন্ন পিঠও আছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখছি একজন ব্লগার হত্যাকারী পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়েছিল। এসব বিষয় সজাগ থাকতে হবে।’
এ সময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাসপোর্ট অধিদফতরের ডিজি মেজর জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
মো:মাসুদ হাসান মোল্লা রিদম,
ঢাকা, রোববার, ২৬ ফেব্রুয়ারি এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।