আদালতের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে সঙ্গীদের সহায়তায় পালান দুই জঙ্গি।প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলসহ ১২ জনকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়েছিল হাজিরা দিতে। সেটি শেষে নিয়ম অনুসারে চারজন করে আসামিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল গারদে।ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, আদালত থেকে গারদে নেওয়ার সময় শামীম ও সোহেল হ্যান্ড-কাফ পরিহিত ছিল। দুজন করে একই হ্যান্ড-কাফে বাধা ছিল। এ সময় পুলিশের চোখে মুখে যে দ্রব্য ছিটিয়ে দেওয়া হয়, সেটি ছিল পিপার স্প্রে।
এটি এমন একটি রাসায়নিক যৌগ যা চোখের প্রদাহ ঘটায়। ফলে অশ্রু, ব্যথা এমনকি সাময়িক অন্ধত্ব ঘটতে পারে। ওসি স্প্রে (ওলিওরেসিন ক্যাপসিয়াম), ওসি গ্যাস ও ক্যাপসিয়াম স্প্রে নামেও এটি পরিচিত।
সিটিটিসি’র ওই সূত্র আরও জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলামের মোট ১২ সদস্যকে রোববার (২০ নভেম্বর) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়েছিল। ১২ জনের মধ্যে যে চারজনকে গারদে নেওয়া হচ্ছিল, তারা ছিলেন- জঙ্গি সদস্য আরাফাত, সবুর ও পালিয়ে যাওয়া শামীম ও সোহেল।
হাজিরা শেষে কোর্টের চারতলা থেকে তাদের নামিয়ে আনা হয়। এ সময় আদালতের ফটকে অন্য জঙ্গি সদস্যরা অপেক্ষমাণ ছিলেন। আরাফাত, সবুর, শামীম ও সোহেল ফটকের সামনে এলে অপেক্ষমাণ জঙ্গি সদস্যরা পুলিশ সদস্য ও নিরাপত্তারক্ষীর দিকে পিপার স্প্রে ছোড়ে। ফটকের সামনে থাকা কয়েকজন সাধারণ জনগণের চোখে-মুখেও স্প্রে লাগে। এতে পুলিশ সদস্যরা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লে সহযোগীরা জঙ্গি শামীম ও সোহেলকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
জঙ্গিদের সহযোগীরা আসেন মোটরসাইকেলে। ঘটনাস্থল থেকে সিটিটিসি পরবর্তীতে একটি কাটার ও একটি চাবি জব্দ করে। ধারণা করা হচ্ছে হ্যান্ড-কাফ কাটতে বা খুলতে জঙ্গি সহযোগীরা ওই চাবি ও কাটার নিয়ে এসেছিল।
পিপার স্প্রের শিকার হন পুলিশের কনস্টেবল মো. নুরে এ আজাদ (৩৯)। প্রথমে তাকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট চিকিৎসাধীন।একটি মোটরসাইকেলে দুই জঙ্গিকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। ওই মোটরসাইকেলের চালকও তাদের সঙ্গে ছিলেন। এক সিসিটিভি ফুটেজে এ দৃশ্য পরিষ্কার। বাকিরাও পালিয়ে গেছে। ফুটেজে একজনকে ব্যাগ নিয়ে দৌড়াতে দেখা যায়। জঙ্গিদের নিয়ে আসা একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। যার কাঁধে ব্যাগ ছিল, এমনও হতে পারে তিনি কোনো বিস্ফোরক বহন করছিলেন।
কারণ, আনসার আল ইসলামের সদস্যরা ওয়েল প্রি প্ল্যান ছাড়া কোনো ঘটনা ঘটায় না। যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে ব্যাগ কাঁধে থাকা ব্যক্তির কাছে বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু ছিল। এটাও নিশ্চিত, ঘটনার আগে তারা পুরো এলাকা ভালোভাবে রেকি করেছে। কীভাবে ঘটনা ঘটিয়ে কোন পথে যাবে এসবই ছিল তাদের পূর্বপরিকল্পিত।
সিটিটিসি’র এ কর্মকর্তা আরও বলেন, জঙ্গিরা যে পথ দিয়ে পালিয়েছে, সেটি ধরেই কয়েকটি টিম কাজ করছে। তাদের গ্রেফতারে আমাদের নানা তৎপরতা চলমান রয়েছে।
ঢাকা,রোববার ২০ নভেম্বর এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।