কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি,৩০ জুন।। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের বালুর বুক চিরে জেগে ওঠা সেই শত বছরের পুরানো নৌকাটি মূল আদল ঠিক রেখে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য, ২২ ফুট প্রস্থ ও প্রায় ৯০ টন ওজনের এ নৌকাটি সংরক্ষণে এমন উদ্যোগ নিয়েছে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর। প্রাচীন এ নিদর্শনটি স্থাপনা করা হলে কুয়াকাটায় আরেক সৌন্দর্যের দর্শনীয় স্থানের দিগন্ত সূচনা হবে। আর এটি শিক্ষার্থীদের গবেষনার কাজে আসবে বলে স্থানীয় ও পর্যটকরা মনে করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের জুলাই মাসের দিকে সৈকতের বালুর মধ্যে জেগে ওঠা এ নৌকাটির অংশ বিশেষ স্থানীয়রা দেখতে পায়। এ অংশটি দেখে লোকজন নানা রকম আলোচনা শুরু করে। পরে গনমাধ্যমে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টি প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের নজরে আসে। এক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ দল এ নৌকাটির খুটিনাটি বিষয়ে গবেষনার পর দেশীয় ও আন্তজার্তিক নৌকা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এটিকে উত্তোলন করে। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে কুয়াকাটার বৌদ্ধমন্দির সংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশে প্রাচীন এ নিদর্শন নৌকাটিকে স্থাপন করা হয়। এ নৌকাটি স্থাপনের পর থেকে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের কাছে দিনদিন এর আকর্ষন বেড়েই চলছে। তবে স্থানীয়দের কাছে স্থানটি নৌকা যাদুঘর নামে বেশ পরিচিতি পায়। এদিকে নৌকাটি যথাযথ সংস্কারের অভাবে অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। আর অবকাঠামোও ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। স্থানটি টিনসেডের একটি বেষ্টনীর ভিতর দৃষ্টিনন্দন ভাবে স্থাপন করা হয়েছে। বিশেষভাবে সংরক্ষিত নৌকাটিকে কাঠের বাতা, টিনের পাত ও গাঢ় রং দ্বারা আবৃত করা হয়। নৌকাটির ভিতর পাওয়া বিশাল আকারের লোহার শিকলটি এর পাশেই রাখা হয়। রক্ষণাবেক্ষন ও দেখভালের জন্য ২ জন লোকও নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া এর কোন রকম ক্ষতিসাধন করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়ে এর দেয়ালে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর। জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর পরে প্রত্মতাত্বিক এই প্রাচীন নিদর্শনটি রক্ষার জন্য আধুনিক স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। অতিসম্প্রতি এ কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম কুয়াকাটায় নৌকাটি পরিদর্শণ করে এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে কুয়াকাটায় পর্যটক-দর্শনার্থীর জন্য একটি দর্শনীয় প্রাচীন পুরাকীর্তি দেখার সুযোগ মিলবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
পর্যটক মো.তারিক হাসান বলেন,এখানে অনেক দর্শনীয় স্পট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রাচীন এ নৌকাটি অন্যতম। এটি আমাদের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে ধারনা যোগাবে। অপর এক পর্যটক সানজিদা মনি জানান, এখানে আগেও একবার এসেছিলাম। জায়গাটি দারুন। এখানের প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি এ নৌকাটি দেখতে ভাল লেগেছে। এটি শিক্ষার্থীদের গবেষনার কাজে আসবে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, নৌকাটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় সরাসারি দেখভাল করছে। পর্যটকদের কাছে আকর্ষনী করার জন্য সংস্কার
করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তানভির রহমান জানান, নৌকাটির আদল ঠিক রেখে সংস্কার করা হবে। সংরক্ষণের জন্য প্রথমে চারদিকে কোমর সমান উচু দেয়ালের পরে পর্যটক দর্শনার্থীরা যাতে সহজে দেখতে পারে এজন্য দেয়ালের উপরে ফাইবার জাতীয় স্বচ্ছ বাউন্ডারি করা হবে। উপরে একটি দর্শনীয় ছাউনি থাকবে। এছাড়া কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের কাছেই থাকবে প্রাচীণ আমলের পাল তোলা নৌকাটি সংরক্ষণ যাদুঘর। এখান থেকে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানার সুযোগ থাকবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
উত্তম কুমার হাওলাদার,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি,
পটুয়াখালী,শনিবার,৩০ জুন,এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।