জনগণকে সেবাদান কোন দয়া-দাক্ষিণ্য বা বদান্যতার বিষয় নয়। মনে রাখতে হবে জনগণের টাকায়ই আমাদের সংসার চলে। সরকারি সেবা পাওয়াটা জনগণের অধিকার।তিন দিনব্যাপী জেলাপ্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিন মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে (ভার্চ্যুয়াল) এ কথা বলেন তিনি।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেবেন। আমরা আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন। মনে রাখতে হবে জনগণের টাকায়ই আমাদের সংসার চলে। তাই জনগণকে সেবাদান কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য বা বদান্যতার বিষয় নয়। সেবা পাওয়াটা জনগণের অধিকার। ’
ভাষণে জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। দায়িত্ব সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। কিন্তু ক্ষমতার যাতে অপপ্রয়োগ না হয় তা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরি। তাই কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল বলেই আজ আমি রাষ্ট্রপতি, আপনারা সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক হয়েছেন। একবার ভেবে দেখুনতো দেশ স্বাধীন না হলে আমরা কে কী হতে পারতাম? তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার উর্ধ্বে স্থান দিবেন। আমরা আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ এসডিজির সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে এবং ২০৪১ সালে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। কিন্তু ভূমি রেকর্ডের সময় এক শ্রেণীর অসাধু কর্মচারী স্থানীয় প্রভাবশালী দালালচক্রের সহযোগিতায় অনেক অনিয়ম করছে এবং অবৈধ সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে জনভোগান্তি বেড়েছে। তাই এসব ব্যাপারে আপনাদের কঠোর হতে হবে এবং যে কোনো অনিয়ম বন্ধ করতে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।রাষ্ট্রপতি জানান, শহরের ন্যায় গ্রামগুলোতে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সেবা কেন্দ্রগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সামাজিক বনায়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন, জলাভূমির উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের চলমান কর্মসূচির বাস্তবায়নে আরও সক্রিয় হতে হবে। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী ও পাহাড় রক্ষা করতে কঠোর হতে হবে। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা,মঙ্গলবার ১৮ জানুয়ারি,এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।