আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডধারীদের টার্গেট করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিনব কায়দায় প্রতারণার দায়ে চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে করেছে সিআইডি। চক্রের সদস্যরা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে কারসাজির মাধ্যমে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়।
জানা গেছে, নির্ধারিত ব্যক্তিদের বিকাশ, নগদ ও রকেট অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে এসব অর্থ হাতিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা।সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে প্রতারণার অভিযান ও গ্রেফতার প্রসঙ্গ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।সম্প্রতি একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় মো. খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদ (৩০) নামে প্রতারণা চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেন সদস্যরা।মুক্তা বলেন, জুনায়েদসহ চক্রে আরও সদস্য আছেন। তারা নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম বিকাশ-নগদ-রকেটের অফিস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। একজন ভুক্তভোগী এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করলে অভিযান পরিকল্পনা করে সিআইডি। পরে রোববার (৩১ জুলাই) এক অভিযানে নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদকে গ্রেফতার হন।
জুনায়েদের সঙ্গে আরও তিন-চারজন এ প্রতারণার কাজ করেন। ছয়টি ধাপে তারা প্রতারণার কাজগুলো করতেন।সিআইডির এ কর্মকর্তা জানান, প্রথম ধাপে প্রতারক চক্রের একজন সদস্য বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে কোনো ভুক্তভোগীকে মোবাইলে ফোন করে তার অ্যাকাউন্ট আপডেট করার জন্য বলেন। আপডেট না করলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানাতেন।
দ্বিতীয় ধাপে ভুক্তভোগীকে তার মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের জন্য বলেন। এভাবে তিনি তিনবার পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড করাতেন।
এরপর প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীকে তার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড ও অর্থ ব্লক হয়ে গেছে বলে জানাতেন। কিন্তু এ অর্থ ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে পাঠানো বলে ভুক্তভোগীকে আশ্বস্ত করতেন। এটি তাদের তৃতীয় ধাপ।
চতুর্থ ধাপে, ভুক্তভোগীর ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর ও সিভিএন নিয়ে নেওয়া হতো। পঞ্চম ধাপে, তারা ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্টে যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেটির ওটিপি নম্বর নিয়ে নিতেন।
ষষ্ঠ ধাপে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নেওয়া ওটিপি নেওয়ার পর সেটি ব্যবহার করে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে থাকা সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতো প্রতারক চক্র। এ ক্ষেত্রে নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে নিতো প্রতারক দল।
টাকা ট্রান্সফারের পর প্রতারকরা তাদের নিজেদের অ্যাকাউন্ট নম্বর গোপন করে ফেলতেন। নিজে ও সহযোগীদের মাধ্যমে জুনায়েদ এখন পর্যন্ত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানান মুক্তা ধর।এ প্রতারণার কাজে ‘ইটস খোকন ব্রো’ ও ‘ইটস খোকন ব্রো টু’ নামে দুটি ফেসবুক পেজ ব্যবহার করতেন জুনায়েদ। পরে বিভিন্ন মানুষকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন। এরপর তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বুঝে মোবাইল নম্বর সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতারণা শুরু করতেন জুনায়েদ। যাদের কাছে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড তাদেরই নিজের শিকারে পরিণত করতেন তিনি।
গ্রেফতার জুনায়েদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর।
ঢাকা,সোমবার ০১ আগষ্ট,এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।