‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে-একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের নয়াদিল্লি প্রান্তে যুক্ত হয়ে ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট ২০২৩’ এর উদ্বোধনী লিডার্স সেশনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।বিশ্বের দক্ষিণের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অগ্রাধিকারগুলো ভাগাভাগি করে নিতে দেশগুলোকে একত্রিত করে ‘কণ্ঠের ঐক্য, উদ্দেশ্যের ঐক্য’ (ইউনিটি অব ভয়েস, ইউনিটি অব পারপাস) স্লোগানে দুই দিনব্যাপী এ ভার্চ্যুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ভারত। প্রায় ১২০টি দেশকে এই ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায়সঙ্গত ও সঠিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই সময়।
তিনি বলেন, আসুন, অধিকতর ভালো ভবিষ্যৎ এবং ভাল বিশ্বের জন্য এক সঙ্গে কাজ করি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারি, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব জনজীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সাহসী, দৃঢ় ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
দক্ষিণ বিশ্বের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য জি-২০ প্ল্যাটফর্মের সামনে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শেখ হাসিনা।প্রথমত, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্বব্যাপী অবশ্যই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সমান্তরালে সামগ্রিক বৈষম্য মোকাবিলায় নতুন একটি দৃষ্টান্তমূলক মডেল প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, স্বল্পোন্নত ও জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকাসহ সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়ন প্রয়োজন।
চতুর্থত, নারীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ সংযুক্ত করতে হবে। তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিনিয়োগের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ নিন, যার জন্য অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পঞ্চমত, সুন্দর জীবনযাপনে সব মানুষের সমান অধিকার থাকতে হবে। জোরপূর্বক বিতাড়িত দুর্ভাগা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার কথা বিশ্ব সম্প্রদায় অবশ্যই ভুলে যাবে না।
সবশেষ দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক মানব সম্পদ উন্নয়নে সাউথ-সাউথ এবং ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশন শক্তিশালী করার কথা বলেন। এখানে অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জি-২০ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকারকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে জি-২০ প্ল্যাটফর্মকে আরও অর্থবহ করতে নরেন্দ্র মোদির দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।জি-২০ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণের একটি দেশ। ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ থিমের অধীনে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জি-২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ।তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে স্বীকৃত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে মাত্র এক দশকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি স্তর থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য সব শর্ত পূরণ করেছে। এটি সন্তোষজনক যে বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম সেরা কোভিড প্রতিরোধী দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পারফরমার হিসেবে স্থান পেয়েছে’ বলেন তিনি। আর্থিক এবং অন্যান্য প্রণোদনার জন্য, ২ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের ২৮টি প্যাকেজ সরাসরি ৭ কোটি ৩ লাখ লোক এবং ২ লাখ ১৩ হাজার সংস্থার কাছে পৌঁছেছে, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে উন্নত ভৌত অবকাঠামো দিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে আকাঙ্ক্ষা রাখি।’
তিনি বলেন, গতবছর স্ব-অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করেছেন যা জিডিপি বাড়াবে। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেল সার্ভিস চালু করা হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষ করব, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
ইতিমধ্যে, বাংলাদেশের অব্যাহত ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা খরচে ঘর এবং জীবিকার উপায় প্রদান করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন ‘আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য, আমরা আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। এসব প্রকল্পের জন্য, আমাদের উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। এই বিষয়ে আমি আশা করি জি-২০ সহায়ক হবে।’
আমাদের ইচ্ছা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক দেশে রূপান্তরিত করা এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু সহনশীল ব-দ্বীপ গড়ে তোলা। ‘আমরা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এবং সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করার প্রত্যাশা করি, যোগ করেন তিনি। সূত্র বাসস।
ঢাকা,বৃহস্পতিবার ১২ জানুয়ারি এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।