গাজীপুর মেট্রোপলিটন কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া এলাকার পৈতৃক সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে আপন ভাই কর্তৃক বোন শিক্ষিকা মমতাজ বেগম আলোচিত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামী গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর জেলা।
গ্রেফতারকৃত আসামির নাম, মামলার ঘটনার সাথে জড়িত তদন্তে প্রাপ্ত গ্রেপ্তারকৃত আসামি ১। উচ্ছাস সরকার (৩০), পিতা-মোঃ দুলাল সরকার, সাং-বাঘিয়া, থানা-কোনাবাড়ী, জিএমপি, গাজীপুরকে গত ১২/০৩/২০২৩ তারিখ দিবাগত রাত ০৩.৩০ ঘটিকার সময় কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ: ভিকটিম মমতাজ বেগম (৫৫), স্বামী-আওরঙ্গজেব খান দুলু, সাং-২৪৫ পূর্ব নাখালপাড়া, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ডিএমপি, ঢাকায় বসবাস করে। ঢাকার নাকালপাড়াস্থ হলি মডেল কিন্ডার গার্ডেন ইংলিশ বেইজড বাংলা মিডিয়াম স্কুলে সিনিয়র শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ইং ০১/০৩/২০১৯ তারিখ বিকাল অনুমান ০৪.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম মমতাজ বেগম বাসা হতে বের হয়ে তার পিতার বাড়ী (বাদীনির মামা আব্দুর রশিদ সরকার এর বাড়ী) জিএমপি কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া সাকিনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরের দিন ইং ০২/০৩/২০১৯ তারিখ সকাল অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমের মেয়েদের নিকট ভিকটিমের চাচাতো বোন মোছাঃ আম্বিয়া (৪৫), স্বামী-মোঃ জহিরুল ইসলাম, সাং-বাঘিয়া, থানা-কোনাবাড়ী, জিএমপি, গাজীপুর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায় যে, মমতাজ বেগম এর মৃত দেহ কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়া ডিসপুকুর পাড়স্থ মন্ডল বাড়ী রোডের পাশের্ব ইটের দেয়াল বেষ্টিত জনৈক শফিউল্লাহ এর পরিত্যাক্ত বাড়ীর ফাঁকা জায়গায় পাওয়া গিয়েছে। কোনাবাড়ী থানা পুলিশ মৃত মমতাজ বেগম এর মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গাজীপুর মর্গে প্রেরণ করেন। এ সংক্রান্তে ভিকটিমের বড় মেয়ে মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কোনাবাড়ী থানায় এজাহার দায়ের করলে সূত্রে বর্ণিত মামলাটি রুজু হয়।
মামলাটি রুজু হওয়ার পর কোনাবাড়ী থানা পুলিশ গত ০৩/০৩/২০১৯ তারিখ হতে ইং ২৫/০৩/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ২৩ দিন তদন্ত করার পর তদন্তকালীন সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশক্রমে মামলাটি পিবিআই গাজীপুর জেলার উপর ন্যস্ত হয়।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয়ের সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান. বিপিএম-সেবা এঁর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ কাউছার উদ্দিন তদন্ত করেন। পরবর্তীতে গত ইং ১৫/০৫/২০২২ থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক(নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান, পিপিএম-সেবা তদন্ত করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাকালে জানা যায় যে, ঘটনার দিন ভিকটিম অনুমানিক সন্ধ্যার পর ঢাকা নাকালপাড়া হতে কোনাবাড়ীস্থিত তার আপন ভাই আব্দুর রশিদ সরকারের বাড়ীতে আসে। এরপর ভিকটিম ও তার ভাই আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যগনসহ জমি জমা ও টাকা পয়সা নিয়ে আলোচনায় বসে। আলোচনার একপর্যায়ে ভাই আব্দুর রশিদ ভিকটিমকে টাকা না দিয়ে স্ট্যাম্পে জোর পূর্বক স্বাক্ষর করার জন্য বলপ্রয়োগ করে এবং শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে। এরপর ভিকটিমকে আব্দুর রশিদ এর ছেলে নিলয় সরকার উপস্থিত সবার সামনে ভিকটিমের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর গ্রেফতারকৃত আসামী আব্দুর রশিদ এর ভাতিজা উচ্ছাস সরকার,আব্দুর রশিদ ও আব্দুর রশিদ এর ছেলে নিলয় সরকারসহ অন্যান্য সহযোগী আসামীগন পরিকল্পনা করে যে, তাদের পার্শ্ববর্তী মন্ডল বাড়ীর এলাকায় লাশটি ফেলে রাখলে পরবর্তীতে মন্ডল বাড়ীর লোকজনকে শিক্ষিকা মমতাজ বেগম হত্যা মামলায় ফঁাসানো সহজ হবে। কারণ ইতোপূর্বে অত্র মামলার আসামীগন মন্ডল বাড়ীর সাধু হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী এবং উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত আসামী ও অন্যান্য সহযোগী আসামীগন ভিকটিমের লাশটি মন্ডল বাড়ী গামী রাস্তা সংলগ্ন পরিত্যাক্ত বাড়ীর বাউন্ডারী মধ্যে ফেলে রেখে চলে যায়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম-সেবা বলেন যে, এটি একটি হত্যা মামলা। ভিকটিমের সাথে আসামীদের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ছিল। ঘটনার দিন ভিকটিম তার আপন ভাই আব্দুর রশিদ এর বাড়ীতে আসে জমি জমা ও টাকা পয়সার সংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য। আসামীগন ও ভিকটিম আলোচনায় বসার পর ভিকটিমকে জমি জমার সমাধান না করে জোর পূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য বললে ভিকটিম উক্ত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় তাকে মারধর করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে এলাকার মন্ডল বাড়ীর লোকজনকে ফাঁসানোর জন্য ভিকটিমের লাশটি মন্ডল বাড়ীর নিকট পরিত্যাক্ত বাড়ীর বাউন্ডারীর ভিতর ফেলে রাখে।
গ্রেফতারকৃত আসামি উচ্ছাস সরকার এ মামলার ঘটনায় নিজেকে ও অন্যান্য জড়িতদের ভূমিকা বিস্তারিত বর্ণনা করে ইং ১৩/০৩/২০২৩ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। সূত্র ঃ কোনাবাড়ী থানার মামলা নং-০৩ তারিখ-০৩/০৩/২০১৯ ইং ধারা-৩০২/২০১/ ৩৪ পেনাল কোড।
মো: সাগর গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুর,বুহস্পতিবার ১৬ মার্চ এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।