বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে একটি চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এর আগে তারা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) অর্থও আত্মসাৎ করেছিল।
সোমবার (২২ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, রোববার রাতে র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর, কাফরুল ও গাজীপুর সদরে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা মো. শাহরিয়ার ইসলাম (২৬), সহযোগী আজিম হোসেন (২৭), শিমুল ভূঁইয়া (৩২), রুবেল মাহমুদ (৩৩), ফয়সাল আহাম্মদ (২৩), ও আনিচুর রহমানকে (২৩) গ্রেপ্তার করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিপিইউ, মোবাইল ফোন, সিমকার্ড, পেনড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও অন্যান্য সরঞ্জামসহ নগদ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৯ টাকা জব্দ করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ১০ মে সিএনএসের অভিযোগ থেকে জানা যায়, তাদের মাসিক লেনদেন বিবরণীর সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের লেনদেন বিবরণীর যাচাই-বাছাই করার পর বিআরটিএর মোট ৩৮৯টি ট্রানজেকশনে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার গড়মিল ধরা পড়ে।
সিএনএস লিমিটেড জানায়, তাদের ওয়েবসাইটে ট্রানজেকশনের পেমেন্ট স্ট্যাটাস পেইড দেখালেও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা জমা হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সিএনএস র্যাব-৪ এর কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়। তারা দাবি করে, তাদের ওয়েবসাইট অথবা পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাক করে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সিএনএস লিমিটেড বাংলাদেশ’ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস মিরপুরের একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, যারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তি বিষয়ক কার্যাদি সম্পাদন করে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটি বিআরটিএর সঙ্গে গত ১০-১১ বছর ধরে চুক্তির মাধ্যমে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফি বিভিন্ন ব্যাংক এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকে। পরে তা বিআরটিএতে হস্তান্তরের মাধ্যমে যাবতীয় লেনদেন সম্পন্ন করে।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিত্তিতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার শাহরিয়ার বিভিন্ন আন-এথিক্যাল হ্যাকিং মেথড অ্যাপ্লাই করে অভিনব কায়দায় সিএনএসের ওয়েবসাইটের পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাক করার মাধ্যমে মানি রিসিপ্ট প্রস্তুত করতেন।
গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফিসহ আরও অর্থ সংগ্রহ করতেন শাহরিয়ার। ফি দেওয়া ব্যক্তিদের মানি রিসিপ্ট দিলেও কোনো টাকা সরকারি ফান্ডে জমা হতো না। গত ১২ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত শাহরিয়ার ও তার সঙ্গীরা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল কোড ব্যবহার করে ৩৮৯টি মানি রিসিপ্ট প্রস্তুতের মাধ্যমে সরকারি সোয়া কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ২০২২ সালের শেষের দিকে চক্রটি ডেসকো কোম্পানির ওয়েবসাইট হ্যাক করে ট্রানজেকশন আইডি তৈরি করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে ডেসকো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের ওয়েবসাইটের কিছু পরিবর্তন আনলে পেমেন্ট স্লিপে আনপেইড উল্লেখ থাকায় গ্রাহকরা পুনরায় বিল পে করেন। র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার শাহরিয়ার এই চক্রের মূল হোতা। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শেষ না করে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময় তিনি মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের পেমেন্ট রেসপন্স কোড সম্পর্কে ধারণা পান। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই প্রতারণার উদ্দেশ্যে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেন এবং সিএনএস লিমিটেডের ওয়েবসাইটের পেমেন্ট গেটওয়ে হ্যাক করে মানি রিসিপ্ট প্রস্তুত করেন।
ঢাকা,সোমবার ২২ মে এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।