ঢাকা: সক্ষমতা ও যোগ্যতা আছে বলেই পুলিশে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সামনে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই বিশ্বাস করি।বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮ এ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়।‘বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ পাওয়ার পর লিডারশিপ বিভাগে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সহেলী ফেরদৌস এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ ২০১৮) রাতে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে মোট ২০ জন নারী সদস্যের হাতে এই
অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সহেলী ফেরদৌস বলেন, এই অ্যাওয়ার্ড আমাকে খুব বেশি উজ্জীবিত করেছে। কাজের মানসিকতা বাড়িয়ে দিয়েছে।আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সহেলী বলেন, নেতৃত্ব সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। আমাদের এখানে কোনো একটা ঘটনায় ক্রাইম এনালাইসিস করে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। লিডিং কোয়ালিটি ছাড়া এ সাফল্য অর্জন দূরূহ হয়ে পড়ে।
পুলিশে নারী নেতৃত্ব আরও বাড়বে এমন প্রত্যাশা করে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি বলেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদেও নারীরা একসময় দায়িত্ব পালন করবেন। ২০০১ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেয়ার পর বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছেন।সহেলী ফেরদৌস বর্তমানে পুলিশ সদর দফতরে এআইজি (মিডিয়া) পদে কর্মরত আছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিষ্ঠা একাগ্রতা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। খুলনা মহানগর পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনে ডিসি (উত্তর) হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি খুলনা শিল্পাঞ্চলের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য কমিউনিটি এঙ্গেজম্যান্টকে শক্তিশালী করেন। বিভিন্ন মামলার তদন্ত-তদারকি করতে গিয়ে এবং অপরাধের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে তিনি উপলব্ধি করেন ওই এলাকার তরুণরাই মূলত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এর পেছনে বেকারত্ব ও অফুরন্ত অলস সময় দায়ী। এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসনের সহযোগী অধ্যাপক এস কে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে ‘কলকারখানা বন্ধের ফলে অপরাধ মাত্রায় প্রভাব’ সংক্রান্ত গবেষণা করেন। শিল্পাঞ্চল এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে বছরব্যাপী এঙ্গেজ রাখার জন্য ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করেন। সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য কালচারাল ক্লাব গঠন করেন।
পুলিশ ও জনগণের অংশীদারত্বে জনমুখী পুলিশিং-এর ক্ষেত্রে তার এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগকে স্থানীয় জনগণ স্বাগত জানায়। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিউনিটি পুলিশের ইনচার্জ হিসেবে কাজ করার সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে তিনি ৫০ হাজার লোকের মহা-সম্মেলন আয়োজনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া তিনি মাদক, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসমাবেশের আয়োজন করেন। এই সমাবেশে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক নারী দর্শকের উপস্থিতি আয়োজনকে অধিকতর সাফল্যমণ্ডিত করে। কমিউনিটির মধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্য-বিবাহ প্রতিরোধ করার জন্য ইউএনএফপিএ-এর অর্থায়নে
তিনি ইনসেপশন ওয়ার্কশপের আয়োজন করেন যা সুধী মহলে ভূয়সী প্রশংসিত হয়।
সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে পুলিশ অফিসারদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের প্রয়োগকে তাৎপর্যপূর্ণ করতে তিনি উদ্যোগী হয়ে হোটেল সোনারগাঁওয়ে কর্মশালার আয়োজন করেন। প্রো-অ্যাকটিভ কর্মের মাধ্যমে গতিশীল পুলিশিংয়ে ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। নারী হিসেবে পুলিশে কাজ করার অন্যতম চ্যালেঞ্জের কথা জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মাহমুদা আফরোজ লাকী বলেন,পুলিশের নারী সদস্য হিসেবে আমি কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পারবো এটা কেউ প্রথমে বিশ্বাস করতে চায় না। কাজ করে প্রমাণ করতে হয় আমি কাজটা পারবো।বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮ এ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়।
মাহমুদা আফরোজ লাকী বলেন, কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে পাঠানোর আগে ঊর্ধ্বতনরা আমাদের নিরাপত্তার কথা ভাবেন। কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে নারী অফিসারকে কেন পাঠানো হলো এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। অথচ ওই ক্ষতিটা কোনো পুরুষ অফিসারের ক্ষেত্রেও হতে পারে। ভুলও সবার ক্ষেত্রে হয় উল্লেখ করে লাকী বলেন, কোনো নারী পুলিশ ভুল করলে সমাজ ব্যবস্থার কারণে অনেকেই বলবে, নারীকে দায়িত্ব দেওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে। অথচ ভুলটা সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে। শত প্রতিকূলতা এড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে নারী পুলিশের সংখ্যা বাড়ছে। আগে এই পেশাকে সম্মানের মনে না
করলেও এখন পুলিশের বিভিন্ন স্তরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। দ্বিতীয় বারের মতো এ পদক পেয়েছেন উল্লেখ করে মাহমুদা আফরোজ বলেন, এ অনুভূতি অবশ্যই ভালো।
পুলিশে নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু বিসিএস ক্যাডার নয়, সব স্তর থেকেই নারী নেতৃত্বকে উঠে আসতে হবে।
সাহসিকতা বিভাগে অ্যাওয়ার্ড অর্জনকারী মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর সার্কেলের কাজী মাকসুদা লিমা বলেন, পুলিশে যোগদানের পর আমাদের যে এক বছরের ট্রেনিং হয় সেটার পর নিজেকে কখনও লেডি হিসেবে মনে করিনি। নিজেকে লেডি বা জেন্টস হিসেবে পার্থক্য করিনি, একজন পুলিশ হিসেবেই ভেবেছি। বর্তমান কর্মস্থলে নারী হিসেবে চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার কর্মস্থলের এলাকায় চরাঞ্চল রয়েছে। সেখানকার মানুষগুলো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রায়ই মারামারিতে লিপ্ত হয়। তারা মাঝে মধ্যে প্রশাসনকেও
মানতে চায় না। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী,হিসেবে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে ছয় ক্যাটাগরিতে ২০ পুলিশ সদস্যকে দেয়া হয় ‘বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮’। অনুষ্ঠানে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (লজিস্টিক) মিলি বিশ্বাসকে আজীবন সম্মানা প্রদান করা হয়। ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে- লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড, মেডেল অব কার্জ অ্যাওয়ার্ড, কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড, পিসকিপিং মিশন, ও এক্সিলেন্ট ইন সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড।
মোঃ মাসুদ হাসান মোল্লা রিদম,
ঢাকা,বৃহস্পতিবার,২৯ মার্চ , এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।